কোনো বিষয় সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা লাভ করতে হলে তার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা আবশ্যক । কারণ প্রকৃতি হলো কোনো বিষয়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য (General character)। অন্যদিকে বৈশিষ্ট্য হলো বিশেষভাবে নজরে পড়ে স্বতন্ত্রধর্মী এমন কিছু (Something especially noticeable)। পুরুষ ও নারী উভয়ই মানুষ । কিন্তু তাদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে দৃশ্যমান ভিন্নতা রয়েছে । কামাল ও কবীর দু'জন বন্ধু । দেখা যাবে তাদের চেহারা, গঠন, আচরণ ইত্যাদিতে পৃথক বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । এভাবেই একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার ভিন্নতা সহজেই নজরে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও পার্থক্য দৃশ্যমান । প্রতিটা কাজও এক ধরনের নয়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষক-এভাবে প্রত্যেকের কাজের বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতা রয়েছে । তাই ব্যবস্থাপনাকে বুঝতে হলে এর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা প্রয়োজন । নিম্নে এরূপ কতিপয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
১. প্রক্রিয়া বা কাজের সমাহার (Process or group of activities): পরস্পর নির্ভরশীল ধারাবাহিক কাজের সমষ্টিকে প্রক্রিয়া বলে। সেই বিচারে ব্যবস্থাপনাও একটি প্রক্রিয়া। কারণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাদি পরস্পর সম্পর্ক রেখে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন হয় । এর একটি কাজে সমস্যা হলে তা অন্য কাজকে সমস্যাগ্রস্ত করে । ফলে লক্ষ্যার্জন ব্যাহত হয় ।
২. সামাজিক প্রক্রিয়া বা কার্যক্রম (Social process or activities): ব্যবস্থাপনা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া । এরূপ প্রক্রিয়া বলতে ধারবাহিক কার্যসমষ্টির সাথে সমাজের বা সমাজ সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সম্পৃক্ততাকে বুঝায় । সেই সাথে এরূপ কাজের সামাজিক উদ্দেশ্যও ক্রিয়াশীল থাকা অপরিহার্য। ব্যবস্থাপনা মানুষকে সংঘবদ্ধ করে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা তার কাজের মধ্য দিয়ে সমাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালন করে থাকে ।
৩. লক্ষ্য অর্জনের উপায় (Means of achieving goals) : কোনো কাজের মূলে যে প্রত্যাশা থাকে তাকে লক্ষ্য বলে । যেকোনো সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মূলে একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ক্রিয়াশীল থাকে । আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য থাকে মুনাফা অর্জন । তাই ব্যবসায় বা এর ব্যবস্থাপনা মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এ কারণেই বিভিন্ন লেখক ব্যবস্থাপনাকে লক্ষ্যার্জনের উপায় হিসেবে গণ্য করেছেন ।
৪. কাজ আদায়ের কৌশল (Technique of getting work): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উপায়-উপকরণের কার্যকর ব্যবহারের প্রতি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বারোপ করে । আর এজন্য ব্যবস্থাপনা সব সময়ই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত জনশক্তির কাছ থেকে যথাযথ কাজ আদায়ে সচেষ্ট থাকে । এ লক্ষ্যেই পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান ইত্যাদি কাজ পরিচালিত হয় । এ জন্যই Rue & Byars বলেছেন, "Management is getting things done through others." অর্থাৎ অন্যদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার কৌশলই হলো ব্যবস্থাপনা ।
৫. অর্থনৈতিক সম্পদ (Economic resources): উৎপাদনের কাজে লাগে এমন কিছুকেই সম্পদ বলে। ব্যবস্থাপনা একটি মূল্যবান অর্থনৈতিক সম্পদ । সকল উপায়-উপকরণ কাম্য মানে থাকার পরও ব্যবস্থাপনা নামক সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে বা অদক্ষতার কারণে লক্ষ্যার্জন সম্ভব হয় না । একই সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একই ধরনের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে যে ভিন্নতা লক্ষ করা যায় তার মুখ্য কারণ ব্যবস্থাপনার মানগত পার্থক্য । অনুন্নত - দেশসমূহে ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা কার্যত নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রধান অন্তরায় ।
৬. জ্ঞানের পৃথক শাখা (Separate branch of knowledge): জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে ব্যবস্থাপনা আজ সর্বত্রই স্বীকৃত । বৃহদায়তন প্রাতিষ্ঠানিক জগতে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ছাড়া দক্ষতার সাথে ব্যবস্থাপনা কার্য পরিচালনা অসম্ভব । বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা আজ সংঘবদ্ধ জ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ।
৭. সর্বজনীনতা (Universality): সর্বজনীনতা বলতে সর্বত্রই এর প্রয়োগযোগ্যতা বা উপযোগিতা থাকাকে বুঝায় । ব্যবস্থাপনা এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় যা যে কোনো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘ব্যবস্থাপনা সর্বজনীন' অর্থাৎ দলবদ্ধ যেকোনো প্রচেষ্টায় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য । পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল পর্যন্ত যে কোনো সংঘবদ্ধ কর্ম প্রচেষ্টায় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয় ।